হেফাজত নেতা-কর্মীদের সরাতে সরকারি পদক্ষেপ বিশ্বকে হতবাক করেছে-দি ইকোনমিস্ট

Posted: May 9, 2013 in Articles and Updates
Tags: , , , , , , , , , , , , , , , , , ,
If you cannot understand Bangla, there are English articles and media posted elsewhere on this blog.
বিশেষ সংবাদদাতা : হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দিতে সরকারি পদক্ষেপ গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত সাপ্তাহিক ‘দি ইকোনমিস্ট’ মন্তব্য করেছে আরেকটি গণহত্যা। যদিও দেশের অধিকাংশ প্রচার মাধ্যম বিষয়টি ব্ল্যাকআউট করার চেষ্টা করছে। গত রোববার মধ্যরাতে শাপলা চত্বরে কি ঘটেছিল তা প্রকাশে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না করলেও বিদেশি প্রচার থেমে নেই। বিশেষ করে দাতাদেশ ও সংস্থাগুলো দূর থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তর পৃথক পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশের প্রচার মাধ্যমে রোববার মধ্যরাতের হত্যাযজ্ঞের বিবরণ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ এবং এশিয়ার একটি শক্তিশালী দেশের স্থানীয় কূটনীতিক জানান, গত রোববার শাপলা চত্বরে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা তাদের মর্মাহত করেছে। এ ব্যাপারে তারা আরো জানিয়েছেন, বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা তাদের মত করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রচ্যের দেশটির কূটনীতিক জানান, তাদের পর্যবেক্ষণে যদি প্রমাণিত হয় ওই রাতে সরকারি বাহিনীর হাতে ব্যাপক সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম মারা গিয়েছে, তাহলে তারা খুবই মর্মাহত হবে।
পশ্চিমাদেশের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তারা কোন মন্তব্য করবেনা। তারা তাদের মত করে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করছে। প্রকৃত ঘটনা জানার পরই তারা মন্তব্য জানাবেন। তবে সকল ইস্যু আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে এটা তারা আশা করেন। হত্যার মধ্য দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয় না বলে তারা মনে করেন। বরঞ্চ এরফলে দেশকে আরো সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশ সংঘাতের ধাবিত হউক এটা তাদের কাম্য নয়।
বান কি মুনের বিশেষ দূত এবং জাতিসংঘের বিশেষ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অষ্কার ফার্নন্দেজ আগামিকাল শুক্রবার ঢাকায় আসছেন। তিনি সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে সরকার এবং বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করবেন। কিন্তু এই সময় এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাওয়াতে আলোচনা ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে। যা সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে পারে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইসলামপন্থীদের ওপর গণহত্যা প্রকাশ হয়ে পড়েছে ইকোনমিস্ট
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশে ‘ইসলামপন্থীদের ওপর গণহত্যার
(ম্যাসাকার) বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট পত্রিকা। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে মঙ্গলবার বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প বিপর্যয়ে সেনারা যখন মৃতদেহের হিসাব করছেন তখন ৬ মে প্রথম প্রহরে ইসলামপন্থীদের ওপর গণহত্যার (ম্যাসাকার) বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় (মতিঝিলে) এ ঘটনা ঘটেছে।
অনলাইন দ্য ইকোনমিস্ট ‘বাংলাদেশ : ভায়োলেন্স অন দ্য স্ট্রিটস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে রোববার গভীর রাতে সরকারি বাহিনীর নৃশংস অভিযানে হেফাজতে ইসলামের বহু নেতাকর্মীকে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছে, এ হত্যাযজ্ঞে নিহতের সংখ্যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
ইকোনমিস্ট বাংলা সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, দু’দিনব্যাপী হেফাজতের সাথে সংঘর্ষে বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৪৯ জন নিহত হয়। তাদের বেশির ভাগই নিহত হয় রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরাও নিহত হয়। কিন্তু ঢাকায় যারা নিহত হয়েছে তাদের বেশির ভাগই লক্ষাধিক প্রতিবাদীর মধ্য থেকেই।
শাপলা চত্বরের গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ইকোনমিস্ট লিখেছে, ৬ মে আসলে কি ঘটেছিল তার বিস্তারিত এখনও অস্পষ্ট। সহিংসতার গ্রাফিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে রক্তাক্ত মৃতদেহ। এ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করছিল দুটি ইসলামপন্থী টেলিভিশন চ্যানেল। সরকার চ্যানেল দুটি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন শহরে চারজনের বেশি জনসমাগমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভয়াবহ সংঘাত অন্য স্থানেও হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ, দক্ষিণে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কাছে হাটহাজারীতে ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বাগেরহাটে। এতে ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। আরেকটি নৃশংস হত্যার দু’মাসের মাথায় এ হত্যাকা- ঘটল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন ও পীড়নের অভিযোগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দলের এক নেতাকে অভিযুক্ত করে যুদ্ধাপরাধ আদালত। এর পরেই সহিংস সংঘাতে কমপক্ষে ৬৭ জন প্রাণ হারায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিরাপত্তা রক্ষীদের অ্যাকশনকে যৌক্তিকতা দেয়ার চেষ্টা করছে। সম্ভবত তারা ভাবছেন যে, এ রকম হত্যাকা-ের ফলে ইসলামী অধিকারের দাবি তীব্র হতে পারে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ৬ মে বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম সরকারের পতন ঘটাতে ঢাকা এসেছিল।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, এভাবেই সামনের মাসগুলো ক্রমেই সংঘাতময় হয়ে উঠছে। যুদ্ধাপরাধ আদালত ১০ জন অপরাধীর বিরুদ্ধে রায় দেবে বলে কথা রয়েছে। কয়েকটি আপিলের রায় দেবেন। এ বছরের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন তারা। বিএনপির ‘বুধ’ ও ‘বৃহস্পতিবারের’ হরতালসহ নিয়মিত হরতালের কথা উল্লেখ করে ইকোনমিস্ট আরো লিখেছে, এ বছর থেকে হরতালের কারণে এরই মধ্যে ৩০টি কর্মদিবস হারিয়ে গেছে। এমন দিনগুলোতে আরও রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোকজন বলছেন, আরও সহিংসতা এড়ানোর জন্য তিনি যুদ্ধাপরাধ আদালতের রায়ের একটি বা দুটি রায় কার্যকর করার পথ বেছে নিতে পারেন। ১৯৯১ সালের পর ষষ্ঠবারের মতো আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেগম জিয়া লড়াই করবেন। এ নিয়ে পূর্বাভাস হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন। উত্তেজনা, রাজপথে সহিংসতা ও তীব্র অস্থিতিশীলতা- এসবই সেই সংকেত দিচ্ছে। সামনের একটি বছর নিয়ে আসবে কঠিন সময়। সূত্র : আইআরআইবি।

Leave a comment